বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় কোরবানির পশুর সংকট দেখা দিয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। ফলে দ্বীপের অনেকেই এবার কোরবানি দিতে পারবেন না।
কয়েক দিন ধরে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় থেকে এই নৌপথে চলাচলকারী সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তার জন্য ৫ জুন থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে টেকনাফ থেকে কোরবানির পশু সেন্ট মার্টিনে নিতে না পারায় দ্বীপে পশুর সংকট দেখা দিয়েছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথ বন্ধ থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ টেকনাফের ওপর নির্ভরশীল সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মানুষ। টেকনাফ থেকে খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আসে। এবার নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় কোরবানির পশুও সেন্ট মার্টিনে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যের প্রায় ৪০০ পরিবার কোরবানি দিয়ে আসছিলেন। পশুর সংকটের কারণে এবার অর্ধেকের বেশি মানুষ কোরবানি দিতে পারছেন না। প্রতিবছর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা টেকনাফ উপজেলার সাবরাং,শাহপরীর দ্বীপ,টেকনাফ সদর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং এলাকার হাটবাজার থেকে কোরবানির গরু-মহিষ কিনে নিয়ে যেতেন; কিন্তু এবার নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্ট মার্টিনের অধিকাংশ পরিবারের পক্ষে পশু কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
সেন্ট মার্টিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিব খান বলেন, সেন্ট মার্টিন জেটির দক্ষিণ পাশে বালুচরে অস্থায়ীভাবে কোরবানির পশুর হাট ছোট আকারে বসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের গৃহপালিত অর্ধশতাধিক গরু, মহিষ ও ছাগল এই হাটে নিয়ে আসা হয় বিক্রির জন্য। মানুষের তুলনায় পশুর সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
স্থানীয় পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, ‘প্রতিবছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় গরু কিনে কোরবানি দিয়ে আসছিলাম; কিন্তু এবার টেকনাফ থেকে পশু আনতে না পারায় বাড়ির পাশের আরও দুজনের সঙ্গে মিলে কোরবানি করছি। শুধু আমি নই, এলাকার অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা গবাদিপশু সংকটের কারণে কোরবানি দিতে পারছে না।’
এদিকে গত শুক্রবার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য এমভি বারো আউলিয়া জাহাজে করে কোরবানির পাঁচটি গরু পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে কোরবানির ঈদের দিন জবাই করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গরিব ও দুস্থ মানুষের মধ্যে এ মাংস বিতরণ করা হবে।
বাড়তি দামে বিক্রি পণ্যসামগ্রী
গত শুক্রবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এমভি বারো আউলিয়া জাহাজে করে সরকারি চালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিনা জাহাজ ভাড়ায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিজে ১৪ লাখ টাকার চাল, ডাল, তেল, আদা, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের তরিতরকারি নিয়ে আসেন। তিনি দাবি করেন, উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে তিন হাজারের বেশি ডিম ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। ১০০ কেজি টমেটোর মধ্যে ৬০ কেজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁকে লোকসান গুনতে হবে।
বর্তমানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি গ্যাস সিলিন্ডার ১ হাজার ৮০০ টাকা, এক বস্তা আতপ চাল ৩ হাজার ৫০০ টাকা, এক লিটার সয়াবিন তেল ২৩০ টাকা, একটি ডিম ২০ টাকা, এক কেজি আলু ১২০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে।