শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সফরে আজ দুপুরে দিল্লি গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে দুদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ সহযোগিতার পাশাপাশি তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সই হতে পারে ১০টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক তারা ভবিষ্যতে কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার দিকনির্দেশনা থাকবে বৈঠকে।
এ সফরের বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নির্বাচনের পরে দুই দেশের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের এই আলাপ আলোচনা আসলে সম্পর্কের গতির একটি মূল্যায়ন। ভারত আমাদেরকে ৮ বিলিয়ন ডলারের যে লোন দিয়েছে, তার ২০ শতাংশের বেশি কিন্তু ব্যবহৃত হয়নি। আমার মনে হচ্ছে, এই জায়গাটা মনোযোগ দিয়ে দেখা উচিত।’
সফরে দিল্লির অগ্রাধিকার নিরাপত্তা ইস্যু, আর ঢাকার অগ্রাধিকার পানি। তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টন ইস্যুর সুরাহা হয়নি এখনো। এ ছাড়া সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা এবং বাণিজ্যের কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে অনেক বেশি আমদানি করি। ভারত কিন্তু এত বেশি আমাদের থেকে নেয় না। এই বাণিজ্য গ্যাপটা, এটা কমিয়ে আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বাজারে আমাদের প্রবেশ বাড়ানোও দরকার। এ ছাড়া সীমান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিস্তা পানিবন্টন চুক্তিতে ভালো কিছু আশা করছি। আগে যে বাধা ছিল, সেই বাধা এখন কিন্তু সেই। তাই আশা করাই যেতে পারে।’
সেন্টমার্টিনে মিয়ানমারের গুলি এবং দেশটির ভেতরে চলমান সংঘাতের আঁচ মোবাবিলায় ভারতের সঙ্গে আলোচনার তাগিদও দিয়েছেন কূটনীতিকদের। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে কিন্তু একটা বড় ধরনের মানবিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও চীনেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকছে। কাজেই এ বিষয়গুলো নিয়ে পারস্পরিক আলোচনার একটা সুযোগ রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হচ্ছেন যারা
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে আসছেন। এছাড়া লক্ষণীয় হলো, বাংলাদেশের ইকোনমিক রিলেশনস (অর্থনৈতিক সম্পর্ক) বিভাগের সচিব মহ. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকিও এই সফরের প্রতিনিধি দলে থাকছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা থাকছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—পাওয়ার ডিভিশনের (বিদ্যুৎ বিভাগ) সিনিয়র সচিব মহ. হাবিবুর রহমান, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহম্মদ হুমায়ুন কবীর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (সেনাবাহিনী) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বাহিনীর অপারেশনস ও প্ল্যান ডিরেক্টরেটের কর্নেল মহম্মদ তরিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক এটিএম রকিবুল হক ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও যথারীতি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ছাড়াও অন্য যে মন্ত্রী বা মন্ত্রী পর্যায়ের সদস্যরা শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহও ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে এবারের দিল্লিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। এছাড়া প্রতিবারের মতোই বাংলাদেশের সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিকদের একটি দলও প্রধানমন্ত্রীর সফর ‘কভার’ করতে দিল্লিতে আসছেন।