বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর গ্রামে ট্রাক চালক সুমন মিয়ার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম এবং নগদ অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার বিবরণ- গত ২৩ জুন বিকেল ৩টার দিকে লস্করপুর গ্রামের কাঠমিস্ত্রী আব্দুল আহাদ (৪৮), তার ছেলে শিপন মিয়া (২২) ও ভাই তৌহিদ মিয়া (৩২) পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওৎ পেতে থেকে ট্রাক চালক সুমন মিয়ার ওপর হামলা চালায়। এসময় আহাদের হাতে থাকা রামদার আঘাতে সুমনের মাথায় মারাত্মক জখম হয়। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে। তার মাথায় ১০টি সেলাই দেওয়া হয়। হামলার সময় সুমনের স্ত্রী ও ছোট বোন এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এছাড়া হামলাকারীরা সুমনের কাছ থেকে দুই দিনের গাড়ি চালানোর আয়, নগদ ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
মামলার অগ্রগতি- এ ঘটনায় সুমন মিয়া ২৬ জুন হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (কগ-১)-এ মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়— কাঠমিস্ত্রী আব্দুল আহাদের কাছে প্রায় তিন মাস আগে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে শোকেস বানানোর চুক্তি করেন সুমন। কিন্তু শোকেস না দিয়ে আহাদ সময়ক্ষেপণ করে। এ বিষয়ে স্থানীয় মুরুব্বিদের জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আহাদ। ঘটনার দিন শোকেস আনার কথা বলে সুমনকে ডেকে নেয় এবং পরে হামলা চালায়। মামলা দায়েরের পরও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো বাদী সুমন মিয়া প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকিতে ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
মানবাধিকার সংস্থায় অভিযোগ- ঘটনার ন্যায়বিচার পেতে সুমনের মা জেসমিন বেগম ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আসক ফাউন্ডেশনের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম হবিগঞ্জ থানা পরিদর্শন করে। টিমের প্রধান ছিলেন সাংবাদিক মোঃ সোহেল রানা, সঙ্গে ছিলেন চিত্র প্রতিবেদক মোঃ ইলিয়াছ ও সমন্বয়ক আলী আজম ভূঁইয়া। টিমের সাথে কথা বলতে গিয়ে ওসি তদন্ত মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আদালতের তাগিদ থাকা সত্ত্বেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) না পাওয়ায় প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। ওসি আশ্বাস দেন, এমসি হাতে পাওয়া মাত্র ৩-৪ কর্মদিবসের মধ্যেই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান— সাধারণত এমসি ৩-৪ দিনের মধ্যেই সরবরাহ করা হয়, তবে পুলিশ কর্মকর্তারা দেরি করে আসলে প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটে। পরিশেষে আসক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ভুক্তভোগী সুমন মিয়া ও তার মা জেসমিন বেগম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন পাবেন। একইসাথে তারা প্রশাসনের কাছে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন