ইউনিয়ন কমিটি গঠনে দলের গঠনতন্ত্র না মেনে নিজের মনমত কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজার বিরুদ্ধে। তিনি জেলার নেতাদের নির্দেশে এরকম কাজ করছেন বললেও জেলার নেতারা জানিয়েছেন গঠতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কাউকে কমিটি করতে কখনোই বলা হয়নি।

বিএনপি’র গঠনতন্ত্রের ধারা ৬ (খ) এর ৩ উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে “ইউনিয়নভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ সমন্বয়ে গঠিত হবে দলের ইউনিয়ন কাউন্সিল। এ কাউন্সিল দুই বছর মেয়াদে কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য থেকে পৌরসভা ও মহানগর ওয়ার্ড কমিটির আদলে ৭১ জনের অনূর্ধ্ব একটি ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত করবেন।”

বিএনপির জুড়ী উপজেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের সভাপতি প্রার্থী আব্দুল মুহিত নামর অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের জন্য প্রথমে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হলেও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাছুম রেজা ও সদস্য হাবিবুর রহমান আসকর সহ কতিপয় নেতা নিজেদের পছন্দের লোকদের কমিটিতে আনতে এখন আর তারা গঠনতন্ত্র মানতে নারাজ। নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও তারা সবার জন্য ইউনিয়ন কমিটির পদে আবেদন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

একই অভিযোগ করেন, উপজেলা আহবায়ক কমিটির আরেক সদস্য ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম, একই ইউনিয়নের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী হেলাল উদ্দিন, পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সহিবুর রহমান তুয়েলসহ অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলমান জুড়ী উপজেলা বিএনপির অন্তর্গত ০৬টি ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন-২০২৫ এর নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির দোহাই দিয়ে যারা ব্যাহত করছেন, তারা কখনোই বিএনপির দুর্দিনে দলের কোন কর্মকাণ্ড ছিলেন না। তারা ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। নিজের স্ত্রী সন্তানদের নামে বিদেশে হোটেল রেস্টুরেন্ট কিনেছেন। তারাই আজ আওয়ামী লীগের ইন্দনে বিএনপির মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি করে ফাটল তৈরি করছেন। ফ্যাসিবাদের এসব ধূসরদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান চুনু বলেন, আমরা সব সময় চাই, দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হউক। কিন্তু দলের কয়েকজন নেতার কারনে আমরা সব সময় বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। এ বিষয়ে জেলা কমিটির সুদৃষ্টি কামনা করছে।

এদিকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, বিএনপি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটির সদস্য হওয়া আবশ্যক। বিএনপির গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠিত হয় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের অধীনস্থ সকল ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে। এই ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য থেকেই ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়, যার মধ্যে সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক পদও অন্তর্ভুক্ত। অতএব, ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক পদে প্রার্থী হতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটির সদস্য হতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. মো. মোস্তাকিম হোসেন বাবুল বলেন, আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় ছিলাম। পরে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাছুম রেজা, যুগ্ম আহবায়ক হাজী হেলাল উদ্দিন, সদস্য এম এ মুহাইমীন শামীম, হাবিবুর রহমান আসকর, মোস্তাক খান, ফাতির আলী ও খলিলুর রহমান মাষ্টার দাবি করেন- বিএনপির রাজনীতি করেন এরকম সবার জন্য প্রার্থীতা উন্মুক্ত করার জন্য। তাদের চাপে পড়ে ও জেলা আহবাহয়ক কমিটির সদস্য সচিবের নির্দেশে আমরা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেই এবং মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য আরও তিন দিন সময় বর্ধিত করি।

তবে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রহিম রিপন বলেন, জুড়ীর আহবায়ক সম্পুর্ণ ভূল বক্তব্য দিয়েছেন। কমিটি গঠনে গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে তাদেরকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্রের বাহিরে কেউ কোনো দাবি করলে, সেটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়।

এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও জুড়ী উপজেলা বিএনপির সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু জানান, জেলা কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের সাথে আলোচনা করে জুড়ী উপজেলা বিএনপিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।