বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন
অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িত স্থানীয় বিট অফিসাররা।স্থানীয় সাংবাদিক ম্যানেজ করতে টাকা নেয় একটি সিন্ডিকেট।
সিলেটে পাথর লুটের ঘটনায় যখন সারাদেশে চলছে তুলপাড়। লুটকারীদের সনাক্ত করতে গঠিত হয়েয়ছে একাধিক তদন্ত কমিটি। কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় বদল করা হয়েছে ওসি-ইউএনসহ সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসককে। একই ভাবে জেলা জেলার আরেকটি পাথর কোয়ারী গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ১১নং মধ্যে জাফলং, ২নং পশ্চিম জাফলং রুস্তমপুর হাদারপার পাথর কোয়ারীর ইসিও এলাকায়সহ বিভিন্ন নদ-নদী থেকে পাথর লুটসহ অবৈধ বালু উত্তোলনের ঘটনায় সেই সেই থ থানা থেকে বদলী করা হয়েছে থানার ওসি সরকার তোফায়েলসহ কয়েকজন এসআইকে। যারা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিট অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন
গোয়াইনঘাট থানায় নতুন ওসি হিসাবে যোগ দিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশে কর্মরত ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিট এলাকায় বন্টন করে দিয়েছেন,নতুন বিট অফিসারদের। প্রতিদিন জাফলং জিরো পয়েন্টে পাথর লুট এলাকায় নজরধারী করছেন স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু তবুও থেমে নেই গোয়াইনঘাটে নদ-নদী থেকে অবৈধ বালু লুটপাট। দায়িত্ব পেয়েই নতুন বিট অফিসাররা সরাসরি জড়িয়ে পড়ছেন অবৈধ বালু উত্তোলনসহ চোরাকারবারের সাথে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজিপুর উত্তর প্রতাপপুর
পিয়াইন নদী থেকে চলছে অবৈধ ভাবে বালু লুটের ঘটনা। দীর্ঘ ১মাস থেকে সরকারী কোন ইজারা ছাড়াই জনৈক সালেহ আহমদ সহ কয়েক মিলে প্রতিদিন ও রাতে প্রায় কয়েক লাখ মণফুট বালু লুট করে নিচ্ছেন। যদিও উপজেলা প্রশাসন বলছে, ১২নং সদর ইউনিয়নের হাজীপুর এলাকায় ইজারা বহির্ভূত বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ১৪ জন শ্রমিককে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক। আটককৃত শ্রমিকদের মধ্যে ১২ জনকে ৩ মাস ও ২ জনকে ১ মাস করে মাটি ও বালুমহাল আইনে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলে সত্য অবৈধ ভাবে যারা বালু উত্তোলন করছে তাদের কাউকে আটক বা জরিমানা করা হয়নি অদৃশ্য কারণে। অভিযানের পরই আবার শুরু হয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগে ঐ এলাকার বিট অফিসার চসার তরিকুল বসে থেকে বালু উত্তোলনের হিসাব বুঝে নিতেন। এখন তার স্থলে বালুর হিসাব বুঝে নিচ্ছে নতুন বিট অফিসার এসআই মহরম ও এএসআই মোবারক যোজন। এই দুই পুলিশ সদস্য নিজেরা বসে থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনে সহযোগী করে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন। প্রতিদিন দাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করে প্রতিফুটে শতকরা ১০ টাকা হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে প্রতিটি নৌকা থেকে।
উপজেলা প্রশাসন বলছে উপজেলার উত্তর প্রতাপুর হাজীপুর এলাকায় কোন বালু মহাল সরকারী ভাবে ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু দিনে রাতে ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে অবৈধ ভাবে নৌকা যোগে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে কারা? ইজারা বহির্ভুত জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সাদাপাথর ও জাফলং জিরো পয়েন্টের সৌন্দর্য ফেরাতে প্রশাসনের তৎপরতার মাঝেই গোয়াইনঘাটে এসব নদ-নদী থেকে ইজারা বহির্ভূত স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। দিন-রাত নৌকা দিয়ে ড্রেজার, লিস্টার ও বোমা মেশিনে চলছে এ বালু লুট। স্থানীয় লোকজন বলেন, সিলেটের নবাগত জেলা প্রশাসক সরোওয়ার আলম সিলেটে যোগদান করার পরই বালু-পাথর লুটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনাদেন অবৈধ বালু-পাথর লুটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। কিন্তু সেই নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেনা গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন। তারা আইওয়াশ নামের অভিযানেই দায়িত্ব শেষ করছে। অপরদিকে থানার নতুন ওসি যোগদানের পর নতুন বিট
অফিসাররা নিজেরা জড়িয়ে পড়ছেন অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে। এ বিষয়ে জেলার এডিসি রেভিনিউ জানান, প্রতাপুর এলাকায় কোন বালু মহাল সরকারি ভাবে ইজারা দেওয়া হয়নি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে
নতুন করে সীমান্তে চোরাচালান: নতুন ওলির কাছ থেকে বিটের দায়িত্ব পেয়ে বিট অফিসাররা নিজ-নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন চোরাচালান সিন্ডিকেট। ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের নতুন বিট এসেই জড়িয়ে পড়েছেন চোরাচালানের সাথে। তিনি নতুন করে গড়ে তুলেছেন চোরাচালান সিন্ডিকেট। কয়েক মাস আগে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে সেনাবাহিনীর অভিযা
কারণে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং সীমান্তের চোরাচালান কিছুদিন বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই আন্দোলনের আগে সিলেটের প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার শেল্টারে গোটা সিলেট ছিল চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিজিবির উপর উপর চাপ থাকায় চোরাচালান কিছুটা কমে এসেছিল। জাফলং সীমান্তে শুরু হয় বালু-পাথর লুট। প্রায় ৩শত কোটি
উত্তর প্রতাপুরে হাজিরপুরে থানার বিট অফিসারের উপস্তিতে সালেহ’র নেতৃত্বে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন
৩নং পূর্ব জাফলং ও ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে শ্যাম কালার নেতৃত্বে চলছে চোরাচালান।
কোটির পাথর লুট হয় জাফলং এলাকা হাফলং এলাকা থেকে। নতুন জেলা প্রশাসক সারোওয়ার আলম এসে সিলেটের বালু-পাথর উত্তোলন পুরোটাই বন্ধ করতে তৎপর হলে, নতুন করে চোরাচালানে ফিরেছে সিলেটের জাফলং সীমান্তের এসব মাফিয়ারা। তারা ইতোমধ্যে বিজিবি, জেলা ডিবি, থানা পুলিশ ও বিট পুলিশ ম্যানেজ করেছে। এখন প্রতিরাতেই সিলেট সীমান্তে বিজিবির সামনেই নামছে চোরাচালান। এসব চোরাচালানে শুধু ভারতীয় পণ্যই থাকছে না, আসছে অস্ত্র ও নিষিদ্ধ মাদক।
এদিকে গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলংয়ের জিরোপয়েন্ট,তামাবিল,সোনাটিলা, স্থলবন্দর, নলমুড়ি, আমস্বপ্ন ও তালতলা সীমান্তে প্রতিরাতে প্রবেশ করছে বড়-বড় -বড় ভারতীয় অবৈধ পণ্যের চোরাচালান। এসব চোরাচালান প্রবেশের নেপথ্য লাইনম্যানরা হলেন,জেলা ডিবি ও পূর্ব জাফলং বিট পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব ভারতীয় চোরাচালান প্রবেশ করছে বাংলা দেশে এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মান্নান মেম্বার। সিলেট সীমান্তে বিজিবির হাতে চোরাকারবারি ধরা পড়েনা। প্রতিটি অভিযানে মাল রেখে পালিয়ে যায় চোরাকারবারিরা। তাহলে কি ইচ্ছে করেই এসব চোরাকারবারিদের গ্রেফতার করছেনা আইনশৃংখলা বাহিনী এ সঙ্গে চোরাচালান ধরা পড়লেও এসব চালানের বেশির ভাগ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট-তামাবিল-ঢাকা মহাসড়কের ভিতরে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর থানার ওসি টাকার ভাগ পাওয়ায় পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। জেলা পুলিশ চোরাচালান আটকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। বরং মাসিক কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে নিজস্ব লাইনম্যানের মাধ্যমে লাইন বিক্রির অভিযোগ রয়েছে জেলার থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিকে,জেলার ডিবির ওসির নামে টাকা তোলেন নিজস্ব একজন লাইনম্যান মান্নান মেম্বার।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ৩ নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মান্নান মেম্বার সংগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প, বিজিবি ক্যান্টিন, সাইনবোর্ড, লালমাটি, তালতলা,১২৭৪ পিলার সীমান্তের বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজের দায়িত্ব পালন করেন।
মান্নান মেম্বারের টাকা পেয়ে বিজিবি সীমান্ত ওপেন করে দেয়। তখন কসমেটিকস, শাড়ি, চকলেট ও কীট সীমান্তের দোকানগুলোতে প্রবেশ করে। সেখান থেকে চলে যায় নিজেদের গোডাউনে।
পরে রিয়াজুল ও সিরাজুল দুই ভাই জেলা ডিবি ও পূর্ব জাফলং বিট পুলিশকে ম্যানেজ করে চালান বোঝাইকৃত ট্রাক সিলেট-ঢাকা অভিমুখে রওনা করে। মধ্য
জাফলং বিট পুলিশের নিজস্ব লাইনম্যান রাধানগর বাজারের জসিম, কামাল, হোসেন, খায়রুল ও রিয়াজ। তাদের নেতৃত্বে লামাপুঞ্জি, সংগ্রাম পুঞ্জির ভারতীয় চোরাচালান চা-বাগানের রাস্তা হয়ে রাধানগর বাজারে আসে। পরে ট্রাকযোগে ভারতীয় চোরাচালান সিলেটের দিকে রওনা হয়।
ও পশ্চিম জাফলং বিট পুলিশের অন্যতম লাইনম্যান শ্যামকালা (হাতিরখাল) ও আহমেদ জুবের। তাদের মাধ্যমে ধ্যেমে পশ্চিম জাফলং বিট পুলিশ ম্যানেজ হয়ে ভারতীয় পণ্য দেশের সীমান্তের পান্থুমাই, মাতুরতল, হাজীপুর দিয়ে সিলেটে পাচারে গাড়ির পাস দিচ্ছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ তুলেছেন। এখন রাত গভির হলে সাই-সাই শব্দে সিলেট শহরে প্রবেশ করছে চোরাচালানের পন্যবাহী বাড়ি।
একাধিক চোরাকারবারি বলছেন,স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি কতিত কিছু নামধারী সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক বখরা দিতে হয় তাদের। কারণ এরাই সকল সাংবাদিক ম্যানেজের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। এসময় তারা কয়েকজন কতিত এন কতিত সাংবাদিকের মোবাইল নাম্বার দেয় এই প্রতিবেদককে। এদিকে বিভিন্ন থানা থেকে বিভিন্ন সাংবাদিক ক্লাবের নামে নির্ধারিত একটি টাকার অংক নিয়ে থাকেন এসব সাংবাদিকরা। যাতে তাদের অপকর্মের সংবাদ প্রকাশিত না-হয়।
চোরাচালান বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইজি অফিস সূত্র জানায়,সীমান্তের চোরাচালান বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। সীমান্ত দিয়ে যাতে কোন ধরণের অবৈধ জিনিস দেশে প্রবেশ করতে না পারে প্রতিটি মাসিক মিটিংয়ে থানার ওসি ও জেলার এসপিকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
সহকারী সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্র্যাফিক) ও অতিরিক্ত দায়িত্বে স্টাফ অফিসার টু ডিআইজি,সিলেট রেঞ্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম খান বলেন,চোরাচালান প্রতিরোধ করা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। চোরাচালান পণ্য আটকে কোনো থানার তৎপরতা নিস্ক্রিয় পরিলক্ষিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
এ বিষয়ে সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ নাজমুল হক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান, মাদক ও অস্ত্র পাচার প্রতিরোধে বিজিবির অভিযান এবং গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।