বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রকল্প জালিয়াতির একাধিক অভিযোগে তিনি এখন আলোচনার শীর্ষে।
বালাশী-বাহাদুরাবাদ প্রকল্পে ১৭৫ কোটি টাকার অপচয়- ২০২১ সালের জুনে শুরু হয় গাইবান্ধার বালাশী ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার নৌপথ এবং দুই পাশে টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প। প্রকল্প ব্যয় ছিল প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে নাব্য সংকটের কারণে এ নৌপথে একদিনও ফেরি চলেনি। অল্প কিছুদিন লঞ্চ চললেও সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যমুনার ওই স্থানে নৌচলাচল অব্যাহত রাখা প্রায় অসম্ভব জেনেও প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এটি ছিল এক ধরনের ‘সচেতন অপচয়’ যেখানে জনগণের করের অর্থ দিয়ে গড়ে তোলা হয় এক ‘অচল মডেল’।
ভোগাই-কংস নদী খন: কাগজে খনন, বাস্তবে দুর্নীতি- ভোগাই ও কংস নদী খননে ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হলেও, মাঠপর্যায়ে কার্যত কোনো খননকাজই হয়নি। দুদক তদন্ত শুরু করে এবং প্রাথমিকভাবে একাধিক অনিয়মের প্রমাণ পায়। তবে এখনো পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে “দুর্নীতির বিচার কি শুধুই কাগজে? বাস্তবে নয়?”
সাইদুর রহমানের সম্পদের পাহাড়: আয় বহির্ভূত ফ্ল্যাট, জমি, ব্রিক ফিল্ড- আয়কর নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, সাইদুর রহমান ভুয়া স্বর্ণ বিক্রির রসিদ দেখিয়ে প্রায় ৩৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়া তার রয়েছে- ঢাকার খিলগাঁও ও সিদ্ধেশ্বরীতে একাধিক ফ্ল্যাট, কুড়িগ্রামে রড-সিমেন্ট ব্যবসা, আধুনিক ব্রিক ফিল্ড, যা তার সরকারি বেতনের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অবৈধ সম্পদ অর্জনের এই চিত্র শুধু অর্থ নয়, প্রশাসনিক দুর্বলতারও একটি প্রতিচ্ছবি।
জনগণের প্রশ্ন: ব্যবস্থা কবে- নানাবিধ অভিযোগ সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ’র অভ্যন্তরীণ সুত্র বলছে—কর্তৃপক্ষ ‘তথ্য যাচাইয়ের’ নামে সময়ক্ষেপণ করছে, ফলে দুর্নীতিবাজরা পাচ্ছে সময়, সুযোগ ও সুরক্ষা।
শেষ কথা- যদি এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনই শক্ত অবস্থান না নেওয়া হয়, তাহলে এটি প্রশাসনিক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়াবে। দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শুধু বিআইডব্লিউটিএ নয়, পুরো নৌ পরিবহন খাতই জনআস্থার বাইরে চলে যাবে।