রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হতে চান সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের আশীর্বাদ পুষ্ট সিন্ডিকেট নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা। শাহাব-মাছুম সিন্ডিকেট তথা
সিন্ডিকেটের প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে শত থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী ও আওয়ামীলীগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বার বার ইউপি চেয়ারম্যান বনে যাওয়া মাছুম রেজা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হতে তদবির লবিং করছেন এমন খবরে উপজেলা ব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি’র ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, প্রথম দিকে জুড়ী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আহবায়ক হতে জোরালো লবিং করেন মাছুম রেজা। আহ্বায়ক পদে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন তদবিরে এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক পদটি ভাগিয়ে নেন। ভবিষ্যতে জুড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হতে বর্তমানে চলমান ইউনিয়ন কমিটির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। যেসব ইউনিয়নে নিজের লোক নেই, সেইসব ইউনিয়ন কাউন্সিল বিভিন্ন অজুহাতে বন্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজের ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাছুম রেজা। এসব ঘটনায় জুড়ী উপজেলায় বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত দলের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
একটি সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের মদদ পুষ্ট, সাবেক পরিবেশ মন্ত্রীর আপনজন, জুড়ী উপজেলা আওয়ামী সিন্ডিকেটের প্রধান উপদেষ্টা, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে শত থেকে হাজার কোটি টাকা অর্জন সহ সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী ও আওয়ামীলীগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বার বার জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বনে যাওয়া মাছুম রেজা যদি উপজেলা বিএনপির সভাপতি হয়ে যায় তাহলে মাছুম রেজার নেতৃত্বে ওই আওয়ামী সিন্ডিকেটটি আবারো জুড়ী উপজেলায় রাম রাজত্ব করবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বিগত সরকারের শাসনামলে সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি’র আস্থাভাজন হিসেবে আওয়ামীলীগের দলীয় এবং সরকারি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। শাহাব উদ্দিন যখন সংসদসদস্য, হুইপ ও পরিবেশমন্ত্রী ছিলেন তখন তাঁর আস্থা অর্জন করতে শাহাব উদ্দিন সহ আওয়ামীলীগ নেতাদের বেশ কয়েকবার মাছুম রেজার বাড়ীতে গরু, খাসি, মহিষ, হরিণ, মেড়া জবাই করে নিমন্ত্রণ দিয়ে খাইয়েছেন। এছাড়া বিগত সময়ে স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মন্ত্রীর ছেলেকে নিয়ে তার বাসায় প্রায় সময় বিভিন্ন পার্টির আয়োজনও করেছেন। মাছুম রেজা ইউপি নির্বাচনের সময় প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে সকল সেন্টার দখল করে ভোট জালিয়াতি করেছেন এবং বার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের উপর বলয় ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের সাথেও তার বেশ সখ্যতা ছিল। এসএম জাকিরও বেশ কয়েকবার তার বাড়িতে নিমন্ত্রণে এসেছেন এবং বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিয়েছেন। সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন ও সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সাথে সমান তালে সম্পর্ক রেখেছেন মাছুম রেজা। যার ফলে আওয়ামী সিন্ডিকেটের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালনে কোন প্রকার সমস্যা হয়নি মাছুম রেজার।
বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিএনপির কোন পরিচয় ব্যবহার না করলেও এবং ওই সময়ে বিএনপির কোন আন্দোলন সংগ্রামে না থাকলেও মাছুম রেজা ২৪ এর ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর সাথেসাথে খোলস পাল্টে নিজেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি পরিচয় দিতে শুরু করে। কিন্তু আওয়ামী সরকারের আমলে উপজেলা বিএনপির কোন মিছিল বা সমাবেশে মাছুম রেজাকে কখনো দেখা না গেলেও বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হতে মাছুম রেজা জোর লবিং শুরু করেছেন। মাঠে-ঘাটে বলে বেড়াচ্ছেন আওয়ামীলীগের মতো বিএনপিও নাকি তার পকেটে। এমন গুঞ্জন শুনে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে আলাপকালে উপজেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে উপজেলার অসংখ্য বিএনপি’র নেতাকর্মী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিগত ১৭ বছর কোন নেতাকর্মী একদিনের জন্যেও নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। এখন সুসময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের মদদ পুষ্ট এক নেতা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হতে চান। এসব আওয়ামী মদদ পুষ্ট বিতর্কিত কোন নেতা উপজেলা বিএনপির কমিটিতে থাকলে বিএনপির নির্যাতিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা মেনে নিবে না। তাছাড়া এমন নেতাদের হাতে দল কখনো নিরাপদ নয়। তারা সবসময় নিজেদের নিয়ে চিন্তা করেন। দলের নির্যাতিত নিপীড়িত নেতাকর্মীদের নিয়ে তাদের কোন চিন্তা থাকেনা। তারা দেশে টাকা কামিয়ে বিদেশে পাচার করেন। তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন নেতাকর্মীরা।