শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৭ অপরাহ্ন
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে উজ্জ্বল মিস্ত্রি নামে এক প্রতারক দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় গ্রামীণ সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘সমিতি করে অনুদান’ ও ‘মাসিক মুনাফা’—এই লোভনীয় প্রলোভনে তিনি ইতোমধ্যে আশপাশের গ্রামের শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করেছেন। সমিতির নাম: পল্লী সেবা সার্বিক গ্রাম ইউনিয়ন সমবায় সমিতি লি:, যাহার রেজিস্টেশন নং ৬৬ তারিখ : ১৪/০২/২০১৮ ইং নামে পাওয়া যায়।
এনজিও সুযোগের প্রলোভনে কোটি টাকার হাতবদল!
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উজ্জ্বল নিজেকে এনজিও বা বিদেশি দাতাদের প্রতিনিধি দাবি করে গ্রামের মানুষদের বলেন, তার সমিতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অনুদান আসবে, যা সদস্যদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হবে। এজন্য সদস্য হতে হলে “নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে।” অনেকে ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা দিয়েছেন, বিনিময়ে প্রতিমাসে প্রফিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পান। কিন্তু সময় গড়ালেও কোনো টাকা ফেরত মেলেনি।
শিক্ষিত রূপে অভিনয়, টার্গেট সহজ-সরল গ্রামবাসী
উজ্জ্বলের আচরণ ছিল একজন ‘শিক্ষিত ও সজ্জন’ মানুষের মতো। এই রূপ আড়ালে রেখে সে বিশেষভাবে লক্ষ করত গ্রামীণ সঞ্চয়ী পরিবার ও শিক্ষক-প্রকৃতির মানুষদের। খুলনার শিক্ষক সুকান্ত রায় জানান, ২০২২ সালে তিনি উজ্জ্বলের কথায় বিশ্বাস করে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন, কথা ছিল প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা করে প্রফিট পাবেন। এখন উল্টো তিনিই মিথ্যা মামলার শিকার।
ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগীদের হয়রানি
টাকা ফেরত চাইলে উজ্জ্বল পাল্টা ভয়ভীতি, হুমকি ও মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিত। কেউ প্রতিবাদ করলে তার নামে থানায় ‘পাল্টা মামলা’ দিয়ে হয়রানি করত। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েকবার হাতেনাতে ধরা পড়লেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে গেছে অপ্রতিরোধ্য।
চেয়ারম্যানের সহায়তা ও প্রশাসনের নিরবতা
ঝালকাঠি জেলার শিক্ষক সুকান্ত রায় প্রথম বিষয়টি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলামের মাধ্যমে প্রশাসনের নজরে আনেন। চেয়ারম্যান নিজে বিষয়টি তদন্ত করেন এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অপরাধের প্রমাণও পান। এরপরও রহস্যজনক কারণে এখনও পর্যন্ত উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য
প্রতারণার শিকার কয়েকজন জানান, জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন উজ্জ্বলের কথায়। কিন্তু টাকা তো ফেরত আসেইনি, বরং এখন তারা ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছেন। উজ্জ্বলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “জমি বিক্রি করছি, সময় দেন।” কিন্তু সময়ের নামে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও ফেরত মেলেনি এক টাকাও।
ভুক্তভোগীদের দাবি: এই প্রতারক চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগীদের অর্থ ফেরত দিতেও ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।