মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রামের রাউজানে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক নারীকে মধ্যরাতে ঘরে ঢুকে কিরিচ দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। এই লোমহর্ষক দৃশ্য নিজের স্মার্টফোনে ধারণ করেছেন আহত নারীর মেয়ে। মায়ের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে পাশে থাকা তিন বছর বয়সী আরেক শিশুকন্যা ভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ঘটনাটি ঘটেছে রাউজান পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর গ্রামের কাজীপাড়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে।
ভুক্তভোগী তাহেরা আকতার (৩৮) ওই এলাকার আবদুল হাকিমের স্ত্রী। তার মেয়ে সানজিদা শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে মায়ের ওপর হামলার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে তা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, তাহেরা বেগমের স্বামী আবদুল হাকিমের সঙ্গে প্রতিবেশী মঈনুদ্দীন ছরওয়ারের দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি বিরোধপূর্ণ জমিতে মঈনুদ্দীন পাকা ভবন তৈরির চেষ্টা করলে আবদুল হাকিম আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত ওই জমিতে কোনো প্রকার নির্মাণ কাজ না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, আদালতের আদেশ অমান্য করে মঈনুদ্দীন মাটি ভরাট ও পাকা ভবনের কাজ শুরু করেন।
তাহেরা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা এর প্রতিবাদ করলে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ১৫-২০ জনের একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তাহেরা আকতার অভিযোগ করে বলেন, “সন্ত্রাসীরা মূলত আমার স্বামীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এসেছিল। তাকে না পেয়ে তারা আমার ওপর হামলা চালায়।” তিনি জানান, হামলাকারীরা তাকে কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এসময় তার মেয়ে সানজিদা এক হাতে টর্চলাইট ধরে অন্য হাতে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকে। সন্ত্রাসীরা ঘর থেকে তার স্বামীর মৎস্য ব্যবসার মূলধন ১ লক্ষ ৩ হাজার টাকা, একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল এবং একটি স্বর্ণের চেইন লুট করে নিয়ে যায় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তাহেরা আকতার হামলাকারীদের মধ্যে মঈনুদ্দীন ছরওয়ারের ভাতিজা সুমন মুন্সী ও মাসুমকে চিনতে পেরেছেন বলে জানান। তার দাবি, সুমন মুন্সীই তাকে কিরিচ দিয়ে কোপ দিয়েছে। তিনি আরও জানান, হামলাকারীদের সবার হাতেই দেশীয় অস্ত্র ছিল।
এদিকে, অভিযুক্ত সুমন মুন্সী ও মাসুমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জানা গেছে, অভিযুক্ত সুমন মুন্সীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। সুমন রাউজান পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহিউদ্দিন মাস্টারের ছেলে।
এই বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ (এজাহার) দায়ের করা হলে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” তিনি সুমন মুন্সীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।