বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
সারাদেশের চা শিল্পাঞ্চলের চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৮ নং কালিঘাট ইউনিয়নের ফুলছড়া চা বাগানের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ‘ফাগুয়া উৎসব’।
শনিবার (১২ই এপ্রিল) বিকেলে আয়োজিত এ বর্ণিল উৎসবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের যৌথ ব্যবস্থাপনায় দেশীয় সংস্কৃতির এক অনন্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “চা শ্রমিকদের অবদান আমাদের জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখাই আমাদের দায়িত্ব।” জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম, ফিনলে টি কোম্পানির বালিশিরা ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. সালাউদ্দীন, উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রীতম দাশ, চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বাড়াইক এবং চা শ্রমিক প্রতিনিধি রত্মা তাঁতী।
সন্ধ্যায় শুরু হয় উৎসবের মূল সাংস্কৃতিক পর্ব। চা শ্রমিকদের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় নানান ভিন্নধর্মী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।ভোজপুরী সম্প্রদায়ের গুরুবন্দনা, কমেডি ও হোলি গীত; বাড়াইক সম্প্রদায়ের ঝুমুর নৃত্য; গড় সম্প্রদায়ের হোলি গান; উড়িষ্যা সম্প্রদায়ের হাড়ি নৃত্য; পত্র সওরা ও চড়াইয়া নৃত্য; মাহাতো (কুর্মী) সম্প্রদায়ের ঝুমুর নৃত্য এবং তেলেগু সম্প্রদায়ের ডাল ও কাঠি নৃত্য ছিল অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ।

আয়োজক প্রীতম দাশ জানান, “প্রায় দুই শতাব্দী ধরে যারা চা শিল্পে নিরলস শ্রম দিয়ে আসছেন, তাদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্যই এ উৎসবের আয়োজন। এই উৎসবে দেশের প্রায় সব চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “আমরা একটি সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেছি, যার অংশ হিসেবেই এই “ফাগুয়া উৎসব” উদযাপিত হয়েছে। জানুয়ারি মাসে আমরা হারমনি ফেস্টিভাল করেছি। আগামী বছরও হবে। এরই ধারাবাহিকতায় “ফাগুয়া উৎসব” ঐতিহ্যগতভাবেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”
তিনি আরও জানান, “বাগান-বাগানে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এই উৎসবকে বৃহৎ পরিসরে উদযাপনের মধ্য দিয়ে চা শ্রমিকদের সম্মান ও সংস্কৃতি নতুনভাবে তুলে ধরতে পেরেছি। এ আয়োজন সফল করতে যারা পাশে ছিলেন, সবাইকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”